
জুমার খুতবায় ইমাম সাহেব কি পাঠ করেন এবং খুতবা কতটা জরুরী?
ইসলামে জুমার দিনকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় এই দিনটি আল্লাহর কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। হাদিসে বর্ণিত আছে, জুমার দিনে মুসলমানদের জন্য নামাজ আদায় ও খুতবা শোনার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেকেই প্রশ্ন করেন—জুমার খুতবায় ইমাম সাহেব কি পাঠ করেন? খুতবা কি আসলেই জরুরী? এই আর্টিকেলে আমরা বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
খুতবার অর্থ ও তাৎপর্য
“খুতবা” শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো ভাষণ বা বক্তব্য। ইসলামে এটি শুধু সাধারণ বক্তব্য নয়, বরং একটি ইবাদতের অংশ। জুমার নামাজের আগে ইমাম সাহেব যে বক্তব্য প্রদান করেন, সেটিই খুতবা নামে পরিচিত। খুতবায় মুসলমানদের জন্য শিক্ষা, উপদেশ, দিকনির্দেশনা এবং আল্লাহর স্মরণ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
খুতবা ছাড়া জুমার নামাজ পূর্ণ হয় না। ইসলামী ফিকহ অনুযায়ী, খুতবা হলো জুমার নামাজের একটি শর্ত। অর্থাৎ খুতবা পড়া এবং শোনা ছাড়া জুমার নামাজ আদায় হয় না। এজন্য খুতবাকে শুধু বক্তৃতা মনে করলে ভুল হবে; এটি নামাজেরই অংশ।
জুমার খুতবায় ইমাম সাহেব কি পাঠ করেন?
ইমাম সাহেব খুতবা দেওয়ার সময় কিছু নির্দিষ্ট বিষয় অবশ্যই পাঠ করেন। এর মধ্যে রয়েছে:
-
আল্লাহর প্রশংসা (হামদ) খুতবার শুরুতে ইমাম আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং তাঁর মহানত্ব ঘোষণা করেন।
-
রাসূল ﷺ এর উপর দরুদ পাঠ এরপর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ এর উপর দরুদ পাঠ করা হয়।
-
তাকওয়ার নসিহত মুসলমানদেরকে আল্লাহভীরু হতে এবং গুনাহ থেকে বাঁচতে উপদেশ দেওয়া হয়।
-
কুরআন ও হাদিস থেকে উদ্ধৃতি ইসলামী শিক্ষা, সামাজিক ও নৈতিক নির্দেশনা কুরআন ও হাদিস থেকে উল্লেখ করা হয়।
-
মুমিনদের জন্য দোয়া শেষ অংশে মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণ, মাগফিরাত এবং দুনিয়া-আখিরাতের সফলতার দোয়া করা হয়।
প্রথম ও দ্বিতীয় খুতবার মাঝে সামান্য সময় বসা হয়। এটি সুন্নাহ অনুযায়ী করা হয়।
খুতবার গুরুত্ব ইসলামে
ইসলামে খুতবার গুরুত্ব অপরিসীম। হাদিসে এসেছে:
রাসূল ﷺ বলেছেন: “জুমার দিনে খুতবা শুনে নীরব থাকা প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরজ।” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)
অর্থাৎ, শুধু খুতবা দেওয়া নয়; খুতবা শোনা এবং মনোযোগ সহকারে গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক।
খুতবার মাধ্যমে মুসলমানরা সাপ্তাহিক শিক্ষা লাভ করে। প্রতিদিনের ব্যস্ততা শেষে অন্তত সপ্তাহে একদিন হলেও তারা আল্লাহর স্মরণ ও ইসলামের শিক্ষার সাথে নিজেদের সংযুক্ত করে।
খুতবা ছাড়া জুমার নামাজ হয় কি?
খুতবা ছাড়া জুমার নামাজ হয় না। যদি কেউ খুতবা বাদ দিয়ে শুধু চার রাকাত জোহরের নামাজ আদায় করে, তাহলে সেটি জুমার নামাজ গণ্য হবে না; বরং এটি জোহরের নামাজ হবে।
ফকিহদের মতে:
খুতবা দেওয়া ইমামের জন্য ফরজ।
খুতবা শোনা জামাতের জন্য ফরজ।
খুতবা ও সমাজিক প্রভাব
খুতবা শুধু একটি ইবাদত নয়, বরং এটি সমাজের জন্য শিক্ষার মাধ্যমও বটে। জুমার খুতবার মাধ্যমে সমাজের নানা সমস্যা, ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধান, নৈতিকতা এবং ঐক্যের বার্তা মুসলমানদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।
খুতবার মাধ্যমে:
মানুষকে গুনাহ থেকে বিরত থাকতে শেখানো হয়।
সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি হয়।
ইসলামী মূল্যবোধ জাগ্রত হয়।
ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়।
জুমার খুতবা শোনার আদব
১. খুতবার সময় সম্পূর্ণ নীরব থাকতে হবে। ২. কারো সাথে কথা বলা যাবে না। ৩. মোবাইল বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হওয়া যাবে না। ৪. ইমামের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনা আবশ্যক।
রাসূল ﷺ বলেছেন: “যখন ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তখন তুমি যদি তোমার পাশের মানুষকে ‘চুপ করো’ বলো, তাহলেও তোমার জন্য জুমার সওয়াব নষ্ট হয়ে যাবে।” (সহিহ বুখারি)
খুতবা হলো ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং জুমার নামাজের অপরিহার্য শর্ত। ইমাম সাহেব খুতবায় আল্লাহর প্রশংসা, রাসূল ﷺ এর দরুদ, তাকওয়ার উপদেশ এবং মুমিনদের জন্য দোয়া করেন। মুসলমানদের জন্য খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা ফরজ এবং এটি শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব নয়, বরং নৈতিক ও সামাজিক শিক্ষা লাভেরও একটি মাধ্যম। তাই আমাদের উচিত খুতবার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এবং এটি যথাযথভাবে পালন করা।o