৭ টি গুরুত্বপূর্ণ সেটিংস, যা না করলে হ্যাক হতে পারে আপনার গুগল একাউন্ট
2 days ago
0
0
1

৭ টি গুরুত্বপূর্ণ সেটিংস, যা না করলে হ্যাক হতে পারে আপনার গুগল একাউন্ট

আজকের ডিজিটাল যুগে, গুগল অ্যাকাউন্ট আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। Gmail, YouTube, Google Drive, Maps সহ অসংখ্য সার্ভিস এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করা হয়। কিন্তু যদি এই অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যায়, তাহলে ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, ডকুমেন্টস এবং এমনকি আর্থিক তথ্যও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সাইবার অপরাধীরা প্রতিনিয়ত নতুন কৌশল ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করছে। তাই, গুগলের কয়েকটি অতিগুরুত্বপূর্ণ সেটিংস সক্রিয় না করলে আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা দুর্বল হয়ে যায়। এই আর্টিকেলে আলোচনা করব গুগলের ৭ টি অতিগুরুত্বপূর্ণ সেটিংস যা না করলে অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এই সেটিংসগুলো সহজেই সক্রিয় করা যায় এবং এগুলো আপনার অ্যাকাউন্টকে অনেক বেশি সুরক্ষিত করে তোলে।

প্রথমে বুঝে নেওয়া যাক কেন এই সেটিংসগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ। গুগলের তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের শিকার হয়, যার মূল কারণ হলো দুর্বল পাসওয়ার্ড, টু-স্টেপ অথেনটিকেশন না থাকা এবং অ্যাকাউন্ট রিকভারি অপশন সেট না করা। যদি আপনি এই সেটিংসগুলো অ্যাকটিভ করেন, তাহলে হ্যাকারদের জন্য অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। এখন চলুন বিস্তারিত আলোচনা করি গুরুত্বপূর্ণ ৭ টি সেটিংস নিয়ে।

১. টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (2FA) সক্রিয় করুন

গুগল অ্যাকাউন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটিং হলো টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন বা 2FA। এটি সক্রিয় না করলে আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। 2FA চালু করলে শুধু পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করা যায় না; একটি অতিরিক্ত কোড দরকার হয়, যা আপনার ফোনে SMS, অ্যাপ (যেমন Google Authenticator) বা হার্ডওয়্যার কী থেকে পাওয়া যায়।

কীভাবে সক্রিয় করবেন?

  • গুগল অ্যাকাউন্টে লগইন করে myaccount.google.com-এ যান।

  • তারপর Security > 2-Step Verification > Get Started-এ ক্লিক করুন। এখানে আপনার ফোন নম্বর যোগ করুন এবং কোড ভেরিফাই করুন।

এটি সক্রিয় না করলে, কারো কাছে আপনার পাসওয়ার্ড থাকলে সহজেই অ্যাকাউন্ট অ্যাক্সেস করতে পারবে। গুগলের রিপোর্ট অনুসারে, 2FA চালু থাকলে ৯৯% হ্যাকিং প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তাই এটি না করলে আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা দুর্বল হয়ে যায় এবং হ্যাকাররা ফিশিং অ্যাটাকের মাধ্যমে সহজেই গুগল একাউন্টে প্রবেশ করতে পারে।

২. স্ট্রং এবং ইউনিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন

পাসওয়ার্ড হলো অ্যাকাউন্টের প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন। অনেকে সহজ পাসওয়ার্ড যেমন '123456' বা 'password' ব্যবহার করেন, যা হ্যাকারদের জন্য সহজ লক্ষ্য। গুগলের পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে স্ট্রং পাসওয়ার্ড তৈরি করুন এবং প্রত্যেক অ্যাকাউন্টের জন্য ইউনিক রাখুন।

বর্তমান সময়ের সেরা ৫ পাসওয়ার্ড ম্যানেজার

সেটিংসে যান: myaccount.google.com > Security > Password Manager। এখানে আপনার পাসওয়ার্ড চেক করুন এবং যদি দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে চেঞ্জ করুন। পাসওয়ার্ডে অক্ষর, সংখ্যা, সিম্বল এবং ক্যাপিটাল লেটার মিশিয়ে রাখুন। স্ট্রং পাসওয়ার্ড জেনারেট করতে আমাদের এই পাসওয়ার্ড জেনারেটর টুলটি ব্যবহার করতে পারেন Password Generator । না করলে, ব্রুট ফোর্স অ্যাটাকের মাধ্যমে হ্যাকাররা সহজেই পাসওয়ার্ড ক্র্যাক করতে পারে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৮০% হ্যাকিংয়ের কারণ দুর্বল পাসওয়ার্ড। তাই এই সেটিংসটি অবহেলা করলে আপনার Gmail বা Drive-এর মূল্যবান তথ্য এবং ফাইল চুরি হতে পারে।

৩. অ্যাকাউন্ট রিকভারি অপশন সেট করুন

যদি আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয় বা পাসওয়ার্ড ভুলে যান, তাহলে রিকভারি ইমেইল এবং ফোন নম্বর না থাকলে অ্যাকাউন্ট ফিরে পাওয়া কঠিন। এটি না সেট করলে হ্যাকাররা অ্যাকাউন্ট লক করে দিতে পারে।

কীভাবে করবেন? Security > Ways we can verify it's you > Recovery phone/Email-এ যান এবং মোবাইল নাম্বার অথবা ইমেইল যুক্ত করুন। এটি সক্রিয় না করলে, হ্যাকাররা পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে আপনাকে ব্লক করতে পারে। গুগলের অ্যাকাউন্ট রিকভারি প্রক্রিয়া এই অপশনের উপর নির্ভর করে, তাই এটি অবশ্যই সেট করুন। অনেক ব্যবহারকারী এটি অবহেলা করে এবং পরে সমস্যায় পড়েন। আপনি যদি কখনো পাসওয়ার্ড ভুলে যান সেক্ষেত্রে রিকভারি মোবাইল নাম্বার অথবা ইমেইল দিয়ে সহজেই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারবেন।

৪. কানেক্টেড ডিভাইস রিভিউ করুন

আপনার অ্যাকাউন্ট কোন কোন ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেস করা হয়েছে এবং কোন কোন ডিভাইসে লগিন করা আছে, সেটা চেক না করলে অজানা ডিভাইস থেকে হ্যাকিং হতে পারে। গুগল এই সেটিংস দিয়ে আপনাকে সতর্ক করে।

সেটিংস: Security > Your devices > Manage all devices। এখানে অজানা ডিভাইস দেখলে Remove করুন। না করলে, হ্যাকাররা পুরনো ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেস করে তথ্য চুরি করতে পারে। এটি রেগুলার চেক না করলে অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ে।

৫. সিকিউরিটি চেকআপ সম্পন্ন করুন

গুগলের সিকিউরিটি চেকআপ টুল আপনার অ্যাকাউন্টের সব দুর্বলতা চিহ্নিত করে। এটি না করলে অনেক সমস্যা অজানা থেকে যায়।

চেকআপ করতে: myaccount.google.com/security-checkup। এখানে সব স্টেপ ফলো করুন। এটি 2FA, পাসওয়ার্ড, অ্যাপ অ্যাক্সেস সব চেক করে। না করলে, থার্ড-পার্টি অ্যাপ থেকে হ্যাকিং হতে পারে। গুগল সাজেস্ট করে মাসে একবার এটি করতে।

৬. থার্ড-পার্টি অ্যাপ অ্যাক্সেস ম্যানেজ করুন

অনেক অ্যাপ গুগল অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস চায়, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ না রিমুভ করলে হ্যাকিংয়ের দরজা খোলা থাকে। তাই অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ রিমুভ করা অপরিহার্য।

সেটিংস: Security > Third-party apps with account access > Manage third-party access। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ রিমুভ করুন। না করলে, ম্যালওয়্যারযুক্ত অ্যাপ থেকে তথ্য লিক হতে পারে। এটি রেগুলার রিভিউ না করলে অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

৭. সাসপিশাস অ্যাকটিভিটি নোটিফিকেশন চালু করুন

গুগল আননোন লগইন বা অ্যাকটিভিটি দেখলে নোটিফিকেশন পাঠায়। এটি চালু না করলে কেউ আপনার একাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করলেও আপনি জানতে পারবেন না।

সেটিংস: Security > Recent security events > Review security events। নোটিফিকেশন অপশন চালু রাখুন। না করলে, হ্যাকাররা চুপচাপ আপনার একাউন্টে লগিন করে তথ্য চুরি করতে পারে। এটি অ্যাকাউন্টের রিয়েল-টাইম প্রটেকশন দেয়।

এই ৭ টি অতিগুরুত্বপূর্ণ সেটিংস সক্রিয় করলে আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট অনেক সুরক্ষিত থাকবে। কিন্তু শুধু সেট করলেই হবে না; রেগুলার চেক করতে হবে। গুগলের সিকিউরিটি ফিচারগুলো ব্যবহার করে আপনি সাইবার থ্রেট থেকে দূরে থাকতে পারেন। যদি আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়, তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে গুগল সাপোর্টে যোগাযোগ করুন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আজকের প্রয়োজন। এই সেটিংসগুলো না করলে আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই আজই চেক করুন এবং সুরক্ষিত থাকুন। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার উপকারে আসে, তাহলে শেয়ার করুন এবং অন্যদের সচেতন করুন।

#google#secure#hack#protect

Copyright © 2025 TrickBuzz. All Rights Reserved.