১৮ই সেপ্টেম্বর হায়দ্রাবাদের স্বাধীনতা হারানোর ৭১ বছর হয়েছে। হায়াদ্রাবাদ ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত একটি স্বাধীন মুসলিম শাষিত রাস্ট্র ছিল। যার ছিল নিজস্ব মুদ্রা, রেল ব্যবস্থা, ডাক বিভাগ, এয়ারপোর্ট, নৌ যোগাযোগ ব্যাবস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিজস্ব সেনাবাহিনী। আয়তন ছিল বর্তমান ফ্রান্সের আয়তনের প্রায় দ্বিগুণ। ১৯৪৭ সালে যখন ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হয় তখন হায়াদ্রাবাদ নামক এই অঞ্চলটি ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুযায়ী কাশ্মীরের মতই ভারত বা পাকিস্তান কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে স্বাধীন থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। দেশটি জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য আবেদনও জানিয়েছিল। তৎকালীন সময় হায়াদ্রাবাদের শাষক ছিলেন মীর ওসমান আলী খান।
কিন্তু নিজের পেটের ভেতরেই মুসলিম শাষিত একটি দেশ থাকবে, উগ্রবাদী ভারত সেটা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারেনি। ফলে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই হায়দ্রাবাদে হামলা চালানোর জন্য উপযুক্ত সুজোগ খুজতে থাকে ভারত।
হায়দ্রাবাদের ম্যাপ
অবশেষে ১৯৪৮ সালে সে সুজোগ আসে ভারতের হাতে। আক্রমনের অজুহাত তৈরি করতে ভারতের মদদে হায়াদ্রাবাদে তখন হিন্দু-মুসলিমদের মাঝে কলহ বাধিয়ে দেয়া হয়। এই সুজোগে হিন্দুদের উপর অত্যাচার চালানোর অজুহাত দেখিয়ে ১৯৪৮ সালের সেপ্টেম্বরে জহরলাল নেহেরুর নির্দেশে ভারত বিশাল সেনাবাহিনীর বহর নিয়ে হায়াদ্রাবাদে আক্রমন করে। হায়াদ্রাবাদ দখলের এই অভিজানকে ভারত নাম দেয় ‘অপারেশন পোলো’।
হায়াদ্রাবাদের মুসলিম যুবক-পুরুষরাও সেনাবাহিনীর সাথে মিলিত হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতির্ন হয়। কিন্তু বিপুল পরিমান শক্তিশালী অস্ত্রে সজ্জিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর তুলনায় হায়াদ্রাবাদের সেনাবাহিনী ছিলো নিতান্তই ছোট এবং দূর্বল। ফলে ভারতের লাগাতার আক্রমনে হায়াদ্রাবাদের প্রতিরোধ ব্যাবস্থা ধীরে ধীরে ভেঙে পরতে থাকে। শেষ চেষ্টা হিসেবে জাতিসংঘ ও আমেরিকার সাহায্য প্রার্থনা করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
অবশেষে ১৮ সেপ্টেম্বর এই অসম যুদ্ধে মীর ওসমান আলী খান তার বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণ করে। ফলে হায়াদ্রাবাদকে দখল করে নিজের রাজ্যের পরিনত করে ভারত।
কিন্তু যুদ্ধ শেষ হবার পর কোনো প্রতিরোধকারী না থাকার সুজোগে বর্বর ভারত পুরো হায়াদ্রাবাদ জুড়ে মুসলিমদের উপর ভয়াবহ গনহত্যা চালানো অব্যাহত রাখে। হায়াদ্রাবাদ গনহত্যায় ভারত তখন কি পরিমান মুসলিমকে হত্যা করেছে তার সঠিক তথ্য ভারত ধামাচাপা দেয়ায় তা জানা যায়নি। টেইলর, এজি খান সহ বেশ কিছু বিশ্লেষকদের জরিপ অনুজায়ী হায়াদ্রাবাদ গনহত্যায় কমপক্ষে ২ লক্ষ মুসলিমকে হত্যা করা হয়। যাদেরকে ধরতে পেরেছে, তাদের ১ জন মুসলিম পুরুষকেও বাচতে দেয়নি তারা। মুসলিম যুবকদেরকে লাইনে দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা, নারীদেরকে ধর্ষন সহ আরো অনেক বর্বরতা চালায় ভারতীয় বাহিনী। এছাড়া ঘড়বাড়ি ধ্বংস করা, অগ্নিসংজোগ, লুটতরাজের মত ঘটনা ছিলো নিয়মিত ব্যাপার।
সবচেয়ে নির্মম ঘটনাটি ঘটে, ভারতীয় বাহিনীর থেকে নিজেদের সম্ভ্রম বাঁচাতে পালাতে গিয়ে কয়েক হাজার নারী নদীতে পড়ে মারা যায়।
http://www.trickbuzz.design/%e0%a6%ab%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%85%e0%a6%aa%e0%a6%9f%e0%a6%bf%e0%a6%95%e0%a6%b8-%e0%a6%95%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%b2-%e0%a6%95%e0%a6%bf-%e0%a6%8f/
১৯৪৮ সালের পর ভারত সরকার হায়াদ্রাবাদ গনহত্যার কথা পুরোপুরি চেপে যায়। ২০১৩ সালে প্রথমবারের মত ভারতের লোকসভার হিন্দু সদস্য পণ্ডিত সুন্দরলালের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে হায়াদ্রাবাদ গনহত্যার কথা উল্লেখ করা হয় এবং তাতে ৪০ হাজার মুসলীম হত্যার কথা স্বীকার করা হয়।
এই গণহত্যার কথা উপমহাদেশের অনেকে তো বটেই, ভারতেরও খুব কম সংখ্যক লোক জানে , এমনিকি হায়দ্রাবাদেরো অনেকে এ বিষয়ে কিছু জানেনা। এভাবে হায়াদ্রাবাদ গনহত্যা সহ আরো অসংখ্য গনহত্যার কথা ভারত সরকার জনগনের থেকে প্রায় পুরোপুরি গোপন করে ফেলেছে।
© অনির্বাণ